১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | রবিবার
পুরনো দিনের বিদায়, নতুন সূর্যের অভ্যর্থনা — চৈত্রসংক্রান্তি স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙালির ঐতিহ্যের অবিচল সেতুবন্ধন। সংক্রান্তির শেষ হাসি থেকেই শুরু হয় নববর্ষের নতুন গল্প!
ছবিঃ গ্রামের মাঠে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্যরত মানুষদের ছবি।
আজ বাংলা ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ইংরেজি ১৩ এপ্রিল ২০২৫ — বছরের শেষ দিন। দিনটির আরেক নাম চৈত্রসংক্রান্তি। শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়, গ্রাম-বাংলার লোকজ জীবনে এই দিনটির রয়েছে আলাদা আবেদন।
বাংলা বছরের ১২টি সংক্রান্তির মাঝে ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ সবচেয়ে অর্থবহ। কারণ এই দিন শেষ হলেই শুরু হয় নতুন বছর — নববর্ষ। পুরনো সব হিসেব-নিকেশ, বেদনা, ক্লান্তি আর স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার প্রতীক এই দিন।
ইতিহাসের পাতায় ফিরে তাকালে দেখা যায় — প্রাচীন বাংলার কৃষিজীবী সমাজ ফসল ঘরে তোলার পর চৈত্রসংক্রান্তি পালন করত প্রাচুর্যের উৎসব হিসেবে। দেনাপাওনা চুকিয়ে, গৃহস্থের খাতা ঝাড়ামুছা করে, নতুন বছরের প্রস্তুতি শুরু হতো এই সময়ে।
ছবিঃ চৈত্রসংক্রান্তির মুখোশ ও বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনা।
বিশ্বাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন _ সংক্রান্তি ঘিরে রয়েছে নানা লোকাচার, পূজা-পার্বণ, মেলা ও মিলনমেলা। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দক্ষ রাজাদের কন্যাদের নাম অনুসারে চৈত্র ও বৈশাখ মাসের নামকরণ। তাদের নাম ছিল ‘চিত্রা’ ও ‘বিশাখা’। সেই থেকেই এই দুই মাসের এই পরিচিতি।
উৎসবের বৈচিত্র্য_ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনকে ঘিরে চলে আলাদা আলাদা আয়োজন। কোথাও মেলা, কোথাও হালখাতা, কোথাও আবার পিঠাপুলি-পানতার আসর। পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ‘বিজু’ থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার ‘গাজন’, সব মিলিয়ে বাঙালিয়ানার এক প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি।
ছবিঃ গ্রামবাংলায় নববর্ষের উৎসব এর প্রস্তুতি
চৈত্রসংক্রান্তি মানে বিদায় আর নতুন সম্ভাবনার হাতছানি_ নতুন বছর শুরু হবে আগামীকাল পহেলা বৈশাখ ১৪৩২। তাই আজকের দিনটিতে বিদায়ের পাশাপাশি শুরু হয় নতুন প্রত্যাশা বুকে বেঁধে এগিয়ে চলার প্রস্তুতি।
চৈত্রসংক্রান্তি যেন কেবল এক দিনের উৎসব নয়, বরং পুরনো বছরের স্মৃতি আর নতুন বছরের স্বপ্নের মাঝের এক সুন্দর সেতুবন্ধন।