মাথায় দেনার বোঝা নিয়ে দিন কাটছে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ভাস্করের। একান্নবর্তী পরিবারের দায়-দায়িত্ব যেন তার কাঁধে পাহাড় হয়ে চেপে বসেছে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে হয় লুকিয়ে, কারণ দারিদ্র্যের চাপে হাসি মুখেও তার জীবন কষ্টে ভরা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী, এবং একমাত্র শিশুসন্তান নিয়ে চলছে এক দুঃসহ জীবন। সন্তানের বন্ধুর জন্মদিনে উপহার কিনতেও ভাস্করের পরিবারের জন্য তা হয় বিশাল এক চ্যালেঞ্জ।
লাকি ভাস্করের গল্প:
এই গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে তেলেগু সিনেমা ‘লাকি ভাস্কর’, যা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ভাস্করের চড়াই-উতরাই আর সাফল্যের অপ্রত্যাশিত পথে যাওয়ার গল্প। চেনা বাস্তবতার মধ্যেও ভাস্কর একসময় পেয়ে যায় ওপরে ওঠার একটি অবৈধ পথ। সেখান থেকেই শুরু হয় তার ইঁদুর দৌড়। ৩১ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া এবং পরে নেটফ্লিক্সে আসা এই সিনেমা এখন বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
গল্পের প্রেক্ষাপট ও নির্মাণ:
আশির দশকের মুম্বাইয়ের মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন থেকে শুরু হওয়া এই গল্প নব্বইয়ের দশকের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে গিয়ে শেষ হয়। ভারতের আর্থিক দুর্নীতির ঘটনাগুলোর ওপর নির্মিত হওয়া এই সিনেমা হার্শাদ মেহতার মতো বিতর্কিত চরিত্রদের ছায়া তুলে ধরে। বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে পরিচালক ভেঙ্কি আতলুরি তৈরি করেছেন একটি চমৎকার বিনোদনমূলক গল্প, যা সাধারণ দর্শকের কাছে দারুণভাবে পৌঁছাতে পেরেছে।
চরিত্র ও অভিনয়:
ভাস্করের চরিত্রে দুলকার সালমানের অভিনয় অসাধারণ। মধ্যবিত্ত ব্যাংকার থেকে শতকোটির মালিক হয়ে ওঠার যাত্রায় তিনি যেমন বাস্তবতার ছোঁয়া এনেছেন, তেমনি রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলোকে প্রাণবন্ত করেছেন। মীনাক্ষী চৌধুরীও ভাস্করের স্ত্রীর চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। প্রতিটি চরিত্রই গল্পের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পরিচালনার মুন্সিয়ানা:
ভেঙ্কি আতলুরি তার বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য ও নির্মাণশৈলী দিয়ে এই সিনেমাকে একটি আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আশির দশকের মুম্বাই, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, এবং আর্থিক দুর্নীতির প্রেক্ষাপট অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
উপসংহার:
‘লাকি ভাস্কর’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে উচ্চাশার একটি প্রতিচ্ছবি। ভাস্করের মতো জীবন হয়তো অনেকেরই, তবে সবাই লাকি ভাস্কর হতে পারে না। সিনেমাটি সেই স্বপ্ন দেখিয়েছে, আর দর্শককে ভাস্করের যাত্রার অংশীদার করেছে।