রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ | Sunday, 14 April 2025
বাংলা নববর্ষ—শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আবেগের এক উজ্জ্বল প্রতীক। প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল, বাংলা সনের প্রথম দিনটি উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ নামে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই থাকে নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি।
নববর্ষ মানেই নতুন জীবনচর্চার সূচনা। ব্যবসায়ীরা আয়োজন করেন হালখাতা, যেখানে পুরোনো দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে নতুন খাতা খোলা হয়। দোকানগুলোতে ঝুলানো হয় লাল-সাদা রঙের আলপনা আঁকা হালখাতার কার্ড, আর ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে দেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় শহরগুলোতে হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, যার সূচনা হয় সূর্যোদয়ের পরপরই। মুখোশ, পাখা, হাতি, সূর্য এবং নানা প্রতীকী উপকরণে সাজানো হয় এই শোভাযাত্রা। ইউনেস্কো ২০১৬ সালে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে “বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বাঙালির জন্য এক বিরাট গর্ব।
বাড়িতে-বাড়িতে রান্না হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, ডাল, বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচ ও পেঁয়াজ। এই ঐতিহ্যবাহী খাবার যেন নববর্ষের প্রাণ। নতুন জামা-কাপড় পরে ছোট-বড় সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই দিনে নারীরা পরে শাড়ি, পুরুষরা পরে পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ঐতিহ্যবাহী সেন্টু-গেঞ্জি। অনেকে গায়ে আঁকে আলপনা, কপালে দেয় টিপ, আর হাতে পরে চুড়ি। শিশুদের জন্য থাকে নানা খেলাধুলার আয়োজন, যেমন—দড়ি টানাটানি, বালিশ খেলা, কুইজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। নববর্ষের সবচেয়ে আনন্দঘন দিক হলো বৈশাখী মেলা। এই মেলায় দেশীয় হস্তশিল্প, মাটির খেলনা, কাঠের তৈজসপত্র, নকশিকাঁথা, নাগরদোলা, আর পিঠা-পায়েসের স্টল থাকে। এটি শুধুই কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বাঙালির নিজস্ব শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত করে।
রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে দিনভর চলে বৈশাখী বিশেষ অনুষ্ঠান। কবিতা, নাটক, সংগীত, নাচ ও লোকজ সংস্কৃতির চর্চায় মেতে ওঠেন শিল্পীরা। এই সব আয়োজন বাংলা সংস্কৃতিকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ এক নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন ও নতুন পথচলার প্রতীক। এটি শুধু উৎসব নয়, বরং আত্মপরিচয়ের এক গর্বিত প্রকাশ। বাংলার মানুষ এই দিনটিকে যেমন আবেগে পালন করেন, তেমনি এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক সুন্দর নিদর্শন।