বাংলাদেশ আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে একক উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বিকল্প উৎস দেশের তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি), যা সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকার, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। জানা গেছে, এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, “বাজার স্থিতিশীল রাখতে আলু ও পেঁয়াজের জন্য বিকল্প উৎসের সন্ধান দিয়েছে বিটিটিসি। আমদানিকারকদের এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলা হবে।”
বর্তমানে আলুর পুরোটাই এবং বেশিরভাগ পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়। এছাড়া পেঁয়াজের একটি অংশ মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন ও তুরস্ক থেকে আসছে। তবে পরিমাণে তা অনেক কম। বিটিটিসি তাদের প্রতিবেদনে আলুর জন্য জার্মানি, মিশর, চীন ও স্পেন এবং পেঁয়াজের জন্য চীন, পাকিস্তান ও তুরস্ককে বিকল্প উৎস হিসেবে প্রস্তাব করেছে।
ভারতের স্থানীয় বাজারে আলু ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ও রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে বিকল্প উৎসের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। গত এক বছরে ভারতে পেঁয়াজের দাম ১৩১% এবং আলুর দাম ৩৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশি বাজারেও পড়ছে। বিটিটিসি জানিয়েছে, একক উৎসের ওপর নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ৩৯ লাখ টন হলেও ৩০% নষ্ট হওয়ায় সাপ্লাই কমে আসে। ফলে বছরে প্রায় ৩০% পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আলুর ক্ষেত্রে চাহিদা ৮৫-৯০ লাখ টন হলেও সংরক্ষণজনিত কারণে সরবরাহ কিছুটা কমে যায়।
বিটিটিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস ব্যবহারে খরচ কখনও কখনও সমান হয়। সাপ্লাই চেইন সঠিক রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, শুধু আলু ও পেঁয়াজ নয়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেও বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা দরকার।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং আমদানির ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।