প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন যুগের সুচনা করতে চাই অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকার

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকানো এবং প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোর হতাশা দূর করে সম্পর্কোন্নয়নে তৎপর হয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ অস্ট্রেলিয়া। জলবায়ু ইস্যুতে উদারনীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অতিসম্প্রতি ক্ষমতায় আসা অ্যান্টনি আলবানিজির সরকার এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।
এক দশক শাসনের পর অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতা থেকে রক্ষণশীলরা সম্প্রতি বিদায় নেওয়ার পর অ্যান্টনি আলবানিজির নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির নতুন সরকার প্রতিবেশীদের নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘নতুন যুগ শুরুর’ ঘোষণা দিয়েছে। অন্যতম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের দিকে প্রতিবেশীদের ঝুঁকে যাওয়া ঠেকাতে দায়িত্ব গ্রহণের পরই দ্বীপদেশগুলো সফর করেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। সম্প্রতি এ অঞ্চলে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সফরের পর পেনি ওং প্রতিবেশী দেশগুলোয় যান।

অস্ট্রেলিয়া এই অঞ্চলে অন্য ছোট দেশগুলোর কাছে ‘বড় ভাইয়ের’ মতো। কিন্তু জলবায়ু ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার বিগত সরকারগুলোর আচরণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর পরিবারকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। দ্বীপদেশ টুভালুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী এনেলে সোপোয়াগা ২০১৯ সালে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরিসনের সরকার দ্বীপদেশগুলোকে বলত, ‘টাকা নাও… জলবায়ু ইস্যুতে মুখ বন্ধ করো।’
জলবায়ু ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা আলবানিজির সরকার আঞ্চলিক বন্ধন দৃঢ় করতে চাইছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোয় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও খরার প্রকোপ বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই অঞ্চলে দীর্ঘ সফর করেন। বেইজিং চায়, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিজের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত করতে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া মনে করে, এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের প্রভাব বাড়লে তা তার নিজের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বছরের গোড়ার দিকে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে চীন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে এ অঞ্চলে বেইজিংয়ের প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জল্পনা তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজির সরকার দাবি করেছে, এই পরিস্থিতি তাঁর পূর্বসূরি স্কট মরিসনের ‘ভুল কাজের’ প্রমাণ যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেইজিংয়ের জন্য ‘দরজা খুলে’ দিয়েছে।
অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, তাঁর দেশের নতুন সরকার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। গত সপ্তাহে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ ফিজিতে দাঁড়িয়ে পেনি ওং বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, আগের সরকারগুলোর সময় অস্ট্রেলিয়া জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দায়িত্বে অবহেলা করেছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিবারের দেশগুলোর আহ্বান এড়িয়ে গেছে।’

পেনি ওং এ সময় ঘোষণা দেন, তাঁর দেশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও পূর্ব তিমুরে জলবায়ু সম্পর্কিত অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পে সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়া-প্যাসিফিক ক্লাইমেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনারশিপ গঠন করবে।
চীনা প্রভাব কমাতে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের সহপরিচালক ড জর্জ কার্টার বলেন, সম্পর্ক দৃঢ় করতে অস্ট্রেলিয়া অভিবাসননীতিতেও পরিবর্তন আনতে পারে। অস্ট্রেলিয়া সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, দীর্ঘ সময়ের ভিসায় থাকা দ্বীপদেশগুলোর কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের আনার সুযোগ দেওয়া, মৌসুমি কর্মী কর্মসূচির অনিয়ম বন্ধ করা এবং বছরে তিন হাজারের মতো স্থায়ী ভিসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড কার্টার বলেন, এই সুযোগ দেওয়া হলে অভিবাসী পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা ও কাজের সুযোগ পাবে। চীন এদিকে অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় পিছিয়ে থাকবে।
সূত্র : বিবিসি
- « অস্ট্রেলিয়ায় জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিক্ষোভ সমাবেশ »