চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা।


স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নামের এই রাষ্ট্র নানা সমস্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝাট, রাজনৈতিক অস্থিরতা সীমাহীন দূর্নীতি সহ বহু প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও অনেকটা এগিয়েছে বলা যায়। যদিও এই এগোনোর মূল কারণ হচ্ছে ইফেক্ট অব গ্লোবালাইজেশান। যাই হোক দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সময় যতই এগুচ্ছে আমাদের মানবিক সুচক দিন দিন নিচের দিকে নামছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিচার বিভাগ এর জন্য অবশ্যই দায়ী তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী আমরা জনগন! কি অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্যি। আচ্ছা রাষ্ট্রযন্ত্র কি নিজেই সৃষ্টি হয়েছে নাকি জনগন কতৃক সৃষ্ট? নিশ্চয়ই জনগনের বিশাল একটি অংশ দিয়েই এই রাষ্ট্রযন্ত্র গঠিত। তাহলে শুধু সরকার কিংবা বিচার বিভাগের দোষ নাকি আমার আপনার ও? ভাবুন – ভাবুন আর ভাবুন! বিগত দশ বছরে দেশে মারাত্মক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এখনো হচ্ছে। এই যে ব্যাপক হারে ধর্ষণ বেড়েছে। সবাই সামাজিক যোগাযোগ ভার্চুয়াল প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এতেই কি সমাধান হবে? হ্যাঁ আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিবাদকে ছোট করছি না এই প্রতিবাদ চলুক তবে আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক প্রতিবাদ করতে হবে সমাজ ব্যবস্থাতেও। হাজার হাজার তরুন রাস্তায় নামলো প্রতিবাদ করতে সরকার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করলো এতেই কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাবে না কোনভাবেই। কেননা রাতারাতি সিস্টেম পরিবর্তন হয়না। আইনের ও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে। আমি সাধুবাদ জানাই এদেশের বেশিরভাগ তরুনদের যারা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করছেন। সাথে সাথে আহবান জানাচ্ছি প্রকৃত সামাজিক প্রতিবাদের।
আসুন প্রকৃত সামজিক প্রতিবাদ কি তা জানি – প্রকৃত সামজিক প্রতিবাদ হলো অপরাধীকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা। বলুনতো যে বা যারা নোংরামি, সামাজিক অপরাধ, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, মানবাধিকার হরণকারী, কিংবা নোংরা রাজনীতির সহযোগী তারা কি আপনার আমার আশে পাশের কেউ নয়? নিশ্চয়ই তারা আমাদের সমাজে বাস করে। তাহলে বলুন আপনার সমাজে আপনি অপরাধীর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন না কেন? কিসের এত ভয় আপনার? ধর্ষণকারী তার পরিবারে জায়গা কি করে পায়? তার মা কি তার চেহারা দেখে ভয় পায়না? তার বোন কি তার চেহারা দেখে আঁৎকে উঠেনা? তবে নিশ্চয়ই তার পরিবার ধর্ষণের সহযোগী। ধর্ষণকারী কি করে তার পাড়ায় ঢুকে? তার পাড়ার মহিলারা কি তার হাতে নিরাপদ? যদি পাড়ার লোক চুপ করে থাকে তাহলে তারা প্রত্যেকেই ধর্ষকের সহযোগী। ধর্ষকের কি বন্ধু নেই? সে ধর্ষণ করেও কি করে বন্ধু বেষ্টিত হয়ে থাকে? তার বন্ধুরা কি নিজেদের মা বোনের ইজ্জতের পরোয়া করেনা? তাহলে কি করে তারা তাকে তাদের মাঝে গ্রহন করে? এরাও ধর্ষকের সহযোগী। বিশ্বাস করুন এরা প্রত্যেকেই অপরাধী। এটা শুধু ধর্ষণের ক্ষেত্রে নয় সব অপরাধের ক্ষেত্রে। যে সরকারি চাকুরে ২৫০০০ টাকার চাকরি করে ৬০০০০ টাকা খরচ করে সে কি আপনার বাবা, ভাই,বন্ধু, চাচা, মামা, কিংবা অন্য কোন সম্পর্কের কেউ নয়? আপনি তার সাথে একই ঘরে, একই বাড়িতে, একই বিল্ডিং এ, একই পাড়া-মহল্লায়, একই গ্রামে থাকেন না? তাহলে আপনি কি তাকে কখনো প্রশ্ন করেছেন? কখনো খুব কাছের কারও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনার নেই। শুধু দূরের অপরাধ নিয়ে কথা বলবেন কাছের গুলোকে প্রশ্রয় দিবেন এভাবে তো হবে না ভাই! কোনদিনই হবেনা! কারণ আপনিই সিস্টেম তৈরি করেছেন। সরকারের দোষ একতরফা দিয়ে কোন লাভ নেই। যারা রাজনীতি করেন তারা শুধু প্রতিপক্ষের অন্যায় দেখেন আর নিজের দলের অন্যায় দেখেন না! সুযোগ পাইলে নিজেও অন্যায়ের গডফাদার হয়ে যান। তো ভাই কেমনে পরিবর্তন আসবে? আর যারা রাজনীতি করেন না তারা নিরীহ সেজে অন্যায় মাথা পেতে নিয়ে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলেন! তো ভাই কেমনে? সুতারাং ট্রেডিশনাল আন্দোলন করার পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। তা না হলে যতই যাই হোক সিস্টেমে কোন পরিবর্তন আসবে না। সরকার একটা নয় দশটা পাল্টালেও না! ফেরেশতা এনে ক্ষমতায় বসালে সেও সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে। কেননা আন্দোলন শুধু সরকারের বিরুদ্ধে হবে অন্যায় সিস্টেমের বিরুদ্ধে নয়। সিস্টেম বদলালে সরকার অটো বদলাবে। অন্যায়কারী ঠিকে থাকতে পারবেনা। কোনভাবেই না কেননা তার অন্যায়ের হাত তো আপনি ভেঙ্গে দিচ্ছেন সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে।
পরিবর্তন শুরু হোক নিজের থেকে। নিজের ঘর, নিজের পরিবার, বন্ধুমহল, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবশী, গ্রাম, সর্বোপরি পুরো রাষ্ট্রে। তরুনদের মধ্যে অবশ্যই এই বোধ আসতে হবে। যারাই এই চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং একাত্মতা ঘোষনা করছেন প্রথমে নিজে কোন অন্যায় না করার এবং পারিপার্শ্বিক অন্যায় প্রতিরোধ করার শপথ নিন। তবেই এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
লেখকের নামঃ সারোওয়ার আলাম সাজ্জাদ
- « সিএমপির চান্দগাঁও থানার অভিযানঃ গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ০৮
- পুত্র সন্তানের বাবা হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। »