করোনাকালে মানবতার সেবায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীদের নানাবিধ উদ্যোগ

মিজানুর রহমান সুমন: কোভিদ ১৯ মহামারী এলোমেলো করে দিয়েছে মানুষের জীবন। শুধু বাংলাদেশই নয় উন্নত দেশগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোদের কাতারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীরা অগ্রগন্য । বাংলাদেশী দুস্থ মানুষদের , সিডনি প্রবাসীদের , দেশের ডাক্তারদের, কেউ নীরবে আবার কেউ নিজের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে, অনেকে নিজের এলাকায় , অনেকে জাতীয়ভাবে, এমন বহুমূখী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। খবর নিয়ে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংগঠন তাদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেই লকডাউনের পর থেকেই এটা নিয়ে বেশ উৎসাহের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন ।

কম্যুনিটির এই সার্ভিসগুলো গড়ে উঠছে বিভিন্ন সংগঠনকে কেন্দ্র করে। যেমন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিভিন্ন এসোসিয়েশন, নিউজ মিডিয়া, মিডিয়াকেন্দ্রীক সংগঠনগুলো ইত্যাদি। আর তাদের প্রথম সহযোগীতাটির উদ্দেশ্য থাকছে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানরত অস্থায়ী ভিসা হোল্ডাররা। কারন তারা সরকারের থেকে তেমন কোনো সহযোগীতা পাচ্ছেন না। অনেকেই নিজের চাকুরী খুইয়ে এখন দিশেহারা। দেশের অবস্থাও অনেকের ভাল না যে দেশ থেকে টাকাপয়সা আনতে থাকবে। বিষয়টি নিয়ে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের মধ্যে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন,অস্ট্রেলিয়া । স্বাধীন কন্ঠ কথা বলেছে সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আবদুল্লাহর সাথে। তিনি জানান তাদের সীমিত যে ক্ষমতা আছে তাই দিয়ে ও তাদের কিছু জমানো টাকা দিয়ে তারা এখানকার ছাত্রছাত্রীদের সহযোগীতা করছেন । তিনি বলেন, তাদের সহায়তা পেতে হলে অবশ্যই তাকে প্রাক্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হতে হবে এবং এখানে নিজস্ব ফান্ডে পড়াশোনা করতে থাকতে হবে। তারা মোটামুটি চলতে পারার মত টাকা দিতে পারবেন বলে জানান। বাংলাদেশের মানুষদের সহযোগীতা করছে স্বাধীন কন্ঠ মিডিয়া। তারা বরাবরের মতই সিডনি প্রবাসীদের কাছ থেকে কিছু সহায়তা নিয়ে নিজেদের টাকাপয়সা এক করে দেশের প্রতিটি জেলার সহযোগীতা পৌঁছে দিচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় অস্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গের লিস্ট করে তাদের পরবর্তী অন্তত ১৫ দিন চলতে পারার মত খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া বিএনপি ও জিয়া ফোরাম অস্ট্রেলিয়া। তাদের উদ্যোগে গত দুই সপ্তাহ ধরেই চলছে ব্যাপক ত্রান কার্যক্রম। কথা হয়েছিলো সংগঠনটির নেতা জাকির আলমের সাথে। তিনি জানান, তারা এদেশে যত অস্বচ্ছল পরিবার তাদের ফোন দিয়েছে তাদের প্রত্যেককে সহযোগীতা করছেন। চাল , ডাল ,তেল , গরু ও মুরগীর মাংস ইত্যাদি দিয়ে সহযোগীতা করে আসছেন । প্রতি সপ্তাহেই সহযোগীতার একটি টিম মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে চাল ডাল ইত্যাদি দিয়ে আসছে । তারা বাংলাদেশেও সহযোগীতা করেছে এবং সামনে করবেন বলেও জানান জাকির আলম। তিনি বলেন দেশে ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব) এর কাছে সহযোগীতা পোঁছানো হয়েছে। পাশাপাশি ত্রান কার্যক্রমও শুরু করা হবে দ্রুতই। অস্ট্রেলিয়ায় অস্থানরত শিক্ষার্থীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নোমান শামীমের নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবী। কোনো ব্যানার বা ফেস্টুন না। একদম সাধারন সিডনিবাসীর ব্যানারে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খাবার বিতরন করা হচ্ছে। তারা এটার নাম দিয়েছেন ফুড শেয়ারিং প্রোগ্রাম। লাকেম্বার নার্গির রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে বিতরন করা হচ্ছে খাবার। স্বাধীন কন্ঠ প্রত্যক্ষভাবে তাদের এই কর্মযজ্ঞ দেখতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে।

রান্না শেষে খাবার প্যাকেট করা হয়। বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা খুব আগ্রহভরে সেই খাবার নিয়ে যাচ্ছে। নোমান শামীমের সাথে এই কর্মযজ্ঞে আরও আছেন সালমিন সুলতানা,চমন রহমান,নাহিয়ান আজমল,ডা . লাভলী রহমান , এড . নির্মল্য তালুকদার , প্রফেসর আবুল হাসনাত মিল্টন,মহিউদ্দিন কাদের প্রমুখ । তাদের সহযোগীতা করেছে বগুড়া সমিতি অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া সিডনি প্রেস এন্ড মিডিয়া কাউন্সিল প্রবাসীদের সহযোগীতা করছে । সিডনিতে যারা চাকুরিচ্যুত হয়েছে নানান সমস্যায় আছেন তাদের সহযোগীতা করা হচ্ছে সংগঠনটির ব্যানারে। সংগঠনের সভাপতি , সাধারন সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক দেশে বিভিন্ন এলাকায় ত্রান দিয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও এই নিউজে আসেনি এমন অনেক উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা আছেন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশীদের মধ্যে। যারা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন এখানকার বাংলাদেশী যারা খারাপ আছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের মানুষদের পাশে দাঁড়াতেও।



- « অসহায় মানুষের পাশে সামশুল মাস্টারের পক্ষে ত্রান বিতরন
- সিডনিতে এগিয়ে চলছে ছাত্রছাত্রীদের সাথে ফুড শেয়ারিং প্রোগ্রাম »