আঁধার কেটে যাবে

সাহস নিয়ে দাঁড়ান আঁধার কেটে যাবেজাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ।। বিশেষ সম্মানী-বীমায় ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় দেশবাসীকে সাহস নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; এই লড়াইয়ে সরকার জনগণের পাশে আছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। মহামারী ঠেকানোর লড়াইয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উৎসবে রাশ টানার মধ্যে গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তিনি তুলে ধরেন জাতির সামনে। অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা প্রণোদনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকা চিকিৎসাকর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের বিশেষ সম্মানী এবং স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণাও দেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার পর এনিয়ে টানা তৃতীয়বার জাতির সামনে দিক-নির্দেশনা দিতে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বিশ্বজুড়ে লক্ষ প্রাণ হরণকারী এই রোগের বিস্তার এড়াতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে রয়েছে দেশ; লকডাউনের মতো এই অবস্থায় দেশ কার্যত অচল হয়ে আছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবসের পর বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষের উৎসবও করোনাভাইরাস কেড়ে নিলেও প্রথা ভেঙে বৈশাখী আমেজের সেটে গতকাল জাতির সামনে আসেন শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ চলছে, তার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এবার পহেলা বৈশাখ ঘরে উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।
৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ : করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে যেসব পেশার মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের বিশেষ সম্মানী ও বীমার জন্য ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের এই সঙ্কটে দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই সব স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এজন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
সুরক্ষা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই বলে চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীগণ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একইসঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য আমি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
মহামারী প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য,সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীসহ জরুরি সেবা কাজে যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।